রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা বানচালের অভিযোগ
ইউক্রেনে দ্রুত শান্তিচুক্তি চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমানতালে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর প্রশাসন। কিন্তু রাশিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের সব প্রচেষ্টাকে বানচাল করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
আজ শুক্রবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সামরিক জোট ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠক ইউরোপের প্রতিনিধিরা ওই মনোভাব ব্যক্ত করেন। তাঁরা মনে করেন শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠিন অবস্থান গ্রহণ করা উচিত ট্রাম্প প্রশাসনের। কারণ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট শান্তিচুক্তির বিষয়ে আন্তরিক নন
মার্চ মাসে মস্কোকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিয়েভ এতে সম্মতি জানিয়েছিল। শর্ত সাপেক্ষে তাতে সম্মত হবে বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাখ্যান করেছিল মস্কো। তবে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছিল। কিন্তু পরে উভয় পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকের আগে আজ ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারোট বলেন, মস্কো ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জবাব দিতে বাধ্য। তারা [যুক্তরাষ্ট্র] মধ্যস্থতা ও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে।’
‘আমরা আপনাকে দেখছি’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পুতিন বিভ্রান্তি অব্যাহত রেখেছেন। লেং মারাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি চাইলে এখনই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেন। কিন্তু তিনি ইউক্রেন, দেশটির সাধারণ মানুষ এবং জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা আপনাকে দেখছি ভ্লাদিমির পুতিন। আপনি যা করছেন আমরা তা জানি।’ পুতিনের শান্তিচুক্তির আলোচনা ‘অন্তঃসারশূন্য প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছু নয়’ উল্লেখ করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করে তিনি সময়ক্ষেপণ করছেন।’
কানাডা ও এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণের সময়সীমা ঘোষণার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কো ও কিয়েভ উভয়ের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতির রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেনের পক্ষে, যুদ্ধ শেষ করার পক্ষে এবং যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রতি এখনো ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তবে সবাই মনে করেন, এসব করার জন্য রাশিয়ার আরও বেশি আন্তরিক হওয়া দরকার।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করতে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো নিয়ে কোনো সম্মতি হয়নি। তবে সবাই মনে করেন, যুদ্ধবিরতি যত তাড়াতাড়ি হয় তত ভালো। সবাই এই বিষয়ে একমত যে রাশিয়ার আরও বেশি কিছু করা দরকার। রাশিয়ার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া উচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির জয়ের মধ্য দিয়ে ইউরোপের রক্ষাকর্তা হিসেবে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের নেতারা সাধারণভাবে এখনো এই মনোভাব পোষণ করেন। তাঁরা মনে করেন, রাশিয়ার সম্ভাব্য যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রই তাঁদের শেষ ভরসা। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে এবং কিয়েভের ওপর চাপ তৈরি করেছে, ইউরোপীয়রা তাতে বেশ হতাশ হন।
ন্যাটোর এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ইউক্রেন শান্তিচুক্তিতে ইউরোপীয়দের এখনো যুক্ত করা হয়নি। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। কারণ, যে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হবে, সেটার ওপর ইউরোপের আগামী কয়েক দশকের নিরাপত্তা নির্ভর করছে।
ফোনালাপ করবেন না পুতিন-ট্রাম্প
আজ শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন বলেছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আপাতত ফোনালাপের পরিকল্পনা নেই। গতকাল পুতিনের বিনিয়োগ দূতের ওয়াশিংটন সফরের পর ক্রেমলিন এই মন্তব্য করে। তবে মস্কো-ওয়াশিংটনের বিকাশমান অবস্থা নিয়ে ‘সতর্ক আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছে ক্রেমলিন।
বৃহস্পতিবার এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা তাঁকে আপাতত পুতিনের সঙ্গে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন। পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিন নীতিগতভাবে একমত বলে জানিয়েছেন। তবে এ জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
দুই দিনে বিভিন্ন পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার পুতিনের বিনিয়োগ দূত রিল দিমিত্রিভ বলেন, মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের মধ্যে ‘ইতিবাচক গতিশীলতা’ দেখা যাচ্ছে। তবে মতপার্থক্যগুলো বের করতে আরও বৈঠক দরকার।
রিল দিমিত্রিভের মন্তব্যের পরই আজ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন-ট্রাম্পের আপাতত ফোনালাপের সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সূচিতে আপাতত এমন কিছু নেই।’
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসংক্রান্ত আলোচনায় রাশিয়ার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পেসকভ। তবে বিষয়টি বেশ জটিল বলে মনে করেন তিনি।
রুশ হামলা অব্যাহত
এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভে অন্তত ৪ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে শহরটিতে এই নিয়ে চারবার হামলা চালানো হয়েছে। রুশ হামলায় সেখানে বেসামরিক বসতিতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
No comments:
Post a Comment